আমি ঐক্য চাই না! কি আশ্চর্য হচ্ছেন? আসলে না চাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না! তবে এর অপেক্ষায় কাজকাম বাদ দিয়ে বসে থেকে আকাশ-প্রথম স্বপ্ন দেখতে আমি রাজি না।
কারণ, এসব দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত।
ঐক্য হয় না কেন জানেন? এই আপনাদের কারণে। আপনাদের মত কিছু অতি উৎসাহী পণ্ডিত টাইপ (সব দলের) লোকেরাই সব অনর্থের মূল।
দেশ ধর্ম ও মানবতার দরদ যেন আপনাদের মাঝে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনকারী আলেমদের থেকেও বেশি!
আপনারা বাস্তবতা বিবর্জিত আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখেন।
আবার পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনার ঝড় তুলেন।
ঐক্য নেই বলে নিজেরা কিছু করেন না। আবার অন্যদেরকেও নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু সামান্য সম্ভাবনা তৈরি হলে এই আপনারাই ঠুনকো সব যুক্তি বিষয় আশয় সামনে এনে তাকে অংকুরেই বিনাশ করেন।
আচ্ছা আপনাদের আসলে উদ্দেশ্যটা কী?
বলুন দেখি-
আপনারা কি সত্যিই মনে করেন প্রত্যেক সংগঠন তার নিজ নিজ নাম পরিচয় ব্যানার সাইনবোর্ড বিলুপ্ত করে সব এক হয়ে যাবে?
এটা কি আদৌ সম্ভব? বাস্তবতা মাথায় রেখে বলুন দেখি?
কিংবা সত্যিই মনে করেন, কেবল অমুক দলের জন্যই তা হয় না?
যদি তাই হয়। তবে তাদের বাদ দিয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলুন না! অন্তত যেসব দল এক ছিল। এখনো প্রায় একই নামে আছে। দু চার পাঁচ ছয় সাত টুকরাতে খন্ড খন্ড হওয়া এ দলগুলোকে বিলুপ্ত করে এক ব্যানারে নিয়ে আসুন তো দেখি।
আর শুধু রাজনৈতিক দলই বা বলি কেন।
সামাজিক সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক কোথায় নেই এই বিভাজনের সমস্যা।
দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, এমনকি মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত আপনাদের এই দুঃখজনক পদক্ষেপের শিকার। খতমে নবুওয়াতের মত নিরেট ঈমানী আন্দোলনকেও আপনারা ছয় সাত টুকরো করে রেখেছেন।
সেজন্য আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।
কারণ যে জাতি বক্তব্য বিবৃতিতে নাম আগে এসেছে, না পরে এসেছে-তা নিয়ে ঝগড়া বাঁধায়। বসার জায়গা কাঠের চেয়ারে হয়েছে, না শাহী চেয়ারে হয়েছে-এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। একটা স্বতন্ত্র দলের বক্তব্য বিবৃতিতে কি কথা আসবে না আসবে, কার নাম দেয়া হবে, না হবে- এর নীতি নির্ধারক নিজেকেই বানিয়ে নেয়। নিজের মনমত না হলেই অশোভন সব অভিধায় অন্যদের অভিহিত করে। তাদের দিয়ে ঐক্যের আশা না করাই ভালো।
তার চেয়ে বরং চলুন, কাজ চালিয়ে যাই। একে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয় প্রতিযোগী ও সহযোগী ভাবী। আসল শত্রু চিহ্নিত করে তাদের মোকাবেলায় নিজেদেরকে তৈরি করি।
এদেশের কত লক্ষ কোটি মানুষের কাছে এখনো আপনার দলের নাম কিংবা দেওয়াতটাই পৌঁছেনি। নিজেরা নিজেরা কিলাকিলি না করে তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর চেষ্টা করি। নিজেদের সংগঠনকে মজবুত করি। ব্যাপক গণ সম্পৃক্ততা অর্জন করি। সমাজ রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সব সেক্টরে নিজেদের লোক ঢুকানোর ফিকির করি।
নিজেরা পাল্টাই। নিজেদের ভিতর আন্তরিকতা সহানুভূতি সহমর্মিতা সৌহার্দ্য ও হৃদ্যতা বাড়াই। আশিদ্দাউ আলাল কুফফার আর রুহামাউ বাইনাহুম এর গুণ অর্জন করি। দ্বীন ও উম্মাহর স্বার্থে এক সুরে কথা বলি। নিজেদের সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ঐক্যের জন্য বসে না থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আর অন্তত চূড়ান্ত লড়াইয়ের সময় যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনের জন্য লড়তে পারি সে মানসিকতা তৈরি করি।
ঐক্য হওয়ার আগেই ঠেলাঠেলি!
আমার জানামতে এখনো ঐক্যের ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ কেউ নেন নি। অর্থাৎ ঐক্যের প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয় নি। তবুও ফেসবুকে অনেকে লিখালিখা করছেন, 'অমুক দল ঐক্য মানবে না, তমুক আসবে না, অমুক দল বলবে আমাদের কাছে আসুন, তারা কারো কাছে যেতে রাজি নয়!' ইত্যাদি ইত্যাদি অগ্রিম দোষারোপপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েই যাচ্ছেন। এতে ঐক্যের পূর্বেই রেষারেষি ও ফিতনা ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
আমার মনে হয় এসব সেলিব্রিটিরাই ঐক্যের পথে অন্তরায়।
মনে রাখতে হবে, ঐক্যের মানে এই নয় যে সবাই সবার দল বিলুপ্ত করে এক দলে চলে আসবে। বর্তমান সময়ে এটি অসম্ভব। বরং এমনটা আশা করাই বোকামি। এমনকি বর্তমানে এক আমীরের অধীনেও ঐক্যের সম্ভাবনা কম।
এখন ঐক্য বলতে কেবল এটুকুই যে, নির্বাচন ও আন্দোলন কেন্দ্রীক ঐক্য। সব ইসলামী দল এক হবে একত্রে নির্বাচন ও আন্দোলন করার জন্যে। আলোচনার ভিত্তিতে যার যেখানে শক্তি বেশি তাকে সেখানে অন্যরা সাপোর্ট দিবে। এই জোটের একক আমীর থাকবে না। বরং প্রতিটি দলের আমীরই হবেন পরামর্শকমিটির সদস্য। এই সদস্যদের অধিকাংশের রায়েই সিদ্ধান্ত হবে।
এই জোট আওয়ামী লীগ বিএনপির অংশ হবে কিনা তা আগে থেকেই নির্ধারণ করতে হবে। অংশ হলে কে কতটি আসন পাবেন তা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
বর্তমান সময়ে এরুপ ঐক্য চাইলে হতে পারে। নতুবা অন্তত একে অপরের প্রতি আন্তরিক থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। এটিই হবে উত্তম পন্থা। খামাখা ঐক্য হওয়ার আগেই খোচাখুচি করা ঐক্য ভাঙ্গার চেয়েও বড় অপরাধ।
0 Comments