Ticker

6/recent/Main-posts

Header Ads

দুষ্ট বাদশাহ, দুষ্ট যাদুকর এবং ঈমানদার বালক

দুষ্ট বাদশাহ, দুষ্ট যাদুকর এবং ঈমানদার বালক


এবারের গল্পটি আমরা জানবো প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস থেকে। সে অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিলো এক দুষ্ট বাদশাহ আর তার ছিলো এক দুষ্ট যাদুকর। একদিন যাদুকর বাদশাহর কাছে গিয়ে বললো, “আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি, তাই আপনি একজন বালককে আমার কাছে পাঠান, যাকে আমি যাদু শিখিয়ে দিবো।” যেই কথা সেই কাজ, বাদশাহ যাদুকরের কাছে যাদু শিখতে এক বালককে পাঠালো। বালক যে রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করতো সেখানে এক নেককার লোক ছিলো। বালক তাঁর কাছে গিয়ে বসলো এবং তাঁর কথা শুনলো। তাঁর কথায় বালক বেশ অবাক হলো। নেককার লোকদের সেকালে রাহিব বলে ডাকা হতো। যা হোক, তারপর থেকে বালক যাদুকরের কাছে যাওয়ার সময় প্রতিদিনই ঐ নেককারের কাছে যেতো এবং বসতো। এতে করে যাদুকরের কাছে যেতে বালকের অনেক দেরী হয়ে যেতো। সে যখন যাদুকরের কাছে যেতো তখন যাদুকর তাকে মারধোর করতো। ফলে যাদুকর যে তাকে মারধোর করে এ বিষয়টা সে নেককার লোকটির কাছে জানালো। নেককার লোকটি তখন বললেন, “তুমি যদি যাদুকরকে ভয় করো তবে বলবে, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আসতে দেয়নি। আর যদি তুমি তোমার পরিবারকে ভয় করো তবে বলবে, যাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিলো।”
..
এভাবেই চলছিলো। একদিন হঠাৎ বালক একটা বিশাল প্রাণীর সামনে এসে পড়লো। প্রাণীটা মানুষের আসা-যাওয়ার রাস্তা আটকিয়ে রেখেছিলো। এটা দেখে বালক বললো, "আজই জানতে পারবো, যাদুকর সেরা না রাহিব (নেককার) সেরা।" এরপর একটি পাথর হাতে নিয়ে সে বললো, “হে আল্লাহ, যদি যাদুকরের কাজের চেয়ে রাহিবের (নেককারের) কাজ আপনার কাছে বেশি প্রিয় হয়, তবে প্রাণীটাকে আপনি মেরে ফেলুন, যেন লোকজন আসা-যাওয়া করতে পারে।” এরপর সে প্রাণীটার দিকে পাথর ছুড়ে মারলো এবং সেটাকে সে মেরেও ফেললো। ফলে লোকজন আবার যাওয়া-আসা শুরু করলো। এরপর সে নেককার লোকটির কাছে এসে তাঁকে পুরো ঘটনা শুনালো। নেককার লোকটি তখন বললেন, “ছেলে আমার, আজ তুমি আমার থেকেও সেরা। তোমার সম্মান যেখানে পৌঁছেছে তা আমি দেখতে পাচ্ছি। তবে অল্প সময়ের ভেতরেই তোমার পরীক্ষা নেয়া হবে। যদি তোমার পরীক্ষা নেয়া হয় তবে আমার কথা (কাউকে) বলো না।"
.
এদিকে বালক আল্লাহর আদেশে জন্ম থেকে অন্ধ ও ধবল রোগীদের ভালো করে দিলো। দেখা গেলো বালক আল্লাহর আদেশে লোকদের সব রোগই ভালো করে দিচ্ছে। বাদশাহর রাজদরবারের এক লোকও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। একদিন বালকের কথা শুনতে পেলো সে। সেই অন্ধ লোকটি বালকের কাছে অনেক উপহার নিয়ে আসলো এবং তাঁকে বললো, “তুমি যদি আমাকে ভালো করে দাও তবে এসব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিবো।” এ কথা শুনে যুবক বললো, “আমি তো কাউকে রোগ থেকে ভালো করতে পারি না। ভালো করে দেন শুধু আল্লাহ। আপনি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনেন, তবে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করবো, ফলে আল্লাহ আপনাকে ভালো করে দিবেন।” তারপর সে লোকটি আল্লাহর উপর ঈমান আনলো। মহান আল্লাহ ঐ লোকটির চোখ ভালো করে দিলেন। এরপর সে বাদশাহর রাজদরবারে এসে আগের মতোই বসলো। বাদশাহ তার কাছে জানতে চাইলো, “কে তোমার চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছে?” সে বললো, “আমার রব।” এ কথা শুনে বোকা বাদশাহ তাকে আবারও বললো, “আমি ছাড়া তোমার আর কোনো রব আছে কি?” সে বললো, “আমার ও আপনার সকলের রবই হলেন আল্লাহ।”
.
এরপর বাদশাহ তাকে আটকে রেখে টানা শাস্তি দিতে লাগলো, সবশেষে সে ঐ বালকের কথা বলে দিলো। এরপর বালককেও নিয়ে আসা হলো। দুষ্ট বাদশাহ মনে করেছিলো- বালক বুঝি যাদুর ছলেবলে এগুলো করছে, তাই সে তাঁকে বললো, “ছোট্ট ছেলে, তোমার যাদু এমন জায়গায় গেছে যে, তুমি অন্ধ ও ধবল রোগীকেও ভালো করে দাও আর এই করো সেই করো!” বালক বললো, “আমি কাউকে রোগ থেকে ভালো করতে পারি না। ভালো করেন তো শুধু আল্লাহ।” ফলে বাদশাহ তাঁকেও আটকে রেখে শাস্তি দিতে লাগলো, সবশেষে সে নেককার লোকটির কথা বলে দিলো। এরপর নেককার লোকটিকেও ধরে আনা হলো এবং তাঁকে বলা হলো, “তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এসো।” সে এ কথা মেনে নিলো না। ফলে তাঁর মাথার তালুতে করাত রেখে তাঁকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হলো। এতে তার মাথাও দু’ই দিকে দু’ই ভাগ হয়ে গেলো। শেষে ঐ বালকটিকেও আনা হলো এবং তাঁকেও বলা হলো, “তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এসো।” সেও এমন কথা মেনে নিলো না।
.
দুষ্ট বাদশাহ বালককে মারার জন্য নতুন ফন্দি করলো। বালককে সে তার দুষ্ট দলবলের হাতে তুলে দিয়ে বললো, “তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে সহ পাহাড়ে উঠো। পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচুতে ওঠার পর সে যদি তার দীন থেকে ফিরে আসে তবে তো ভালো আর না হয় তাকে সেখান থেকেই ছুড়ে মারবে।” যেই কথা সেই কাজ, লোকেরা তাঁকে নিয়ে গেলো এবং তাঁকে সহ পাহাড়ে উঠলো। তখন বালক দু’আ করে বললো, “হে আল্লাহ, তুমি যেভাবে চাও তাদের ফন্দি থেকে আমাকে বাঁচাও।” তখনই তাদেরকে সহই পাহাড় নড়েচড়ে উঠলো। ফলে বাদশাহর দুষ্ট দলবল পাহাড় হতে পড়ে গেলো। আর বালক হেঁটে হেঁটে বাদশাহর কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ বালকের কাছে জানতে চাইলো, “তোমার সাথীদের কী হলো?” সে বললো, “আল্লাহ আমাকে তাদের কাছ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।”
.
আবারও বাদশাহ তাঁকে তার আরেক দুষ্ট দলের হাতে তুলে দিয়ে বললো, “তাকে তোমরা নিয়ে যাও এবং বড় নৌকায় উঠিয়ে তাকে সাগরের মাঝামাঝি জায়গায় নিয়ে যাও। তারপর সে যদি তার দীন থেকে ফিরে আসে তবে তো ভালো আর না হয় তোমরা তাকে সাগরে ফেলে দিবে।” তারা তাঁকে সাগরে নিয়ে গেলো। এবারও সে দু’আ করে বললো, “হে আল্লাহ, তুমি যেভাবে চাও তাদের ফন্দি থেকে আমাকে বাঁচাও।” সাথে সাথে নৌকাটি তাদের সহ উল্টে গেলো। ফলে বাদশাহর দুষ্ট দলবল পানিতে ডুবে মরলো। আর বালক হেঁটে হেঁটে বাদশাহর কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ বালকের কাছে আবারও জানতে চাইলো, “তোমার সাথীদের কী হলো?” সে বললো, “আল্লাহ আমাকে তাদের কাছ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।”
.
শেষে বাদশাহকে বালক বললো, “আমি যেভাবে বলবো সেভাবে না করলে তুমি আমাকে মারতে পারবে না।” বাদশাহ বললো, “সে আবার কী?” বালক বললো, “একটি মাঠে লোকেদেরকে একসাথে বসাও। তারপর একটি কাঠের শূলীতে আমাকে উঠিয়ে আমার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রাখো। এরপর "বালকের রব আল্লাহর নামে" বলে আমার দিকে তীর ছুড়ে মারো। এটা যদি তুমি করো তবেই তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারবে।” বাদশাহ বালকের কথা মতোই কাজ করলো। বাদশাহ বিশাল মাঠে তার দেশের লোকদেরকে ডেকে আনলো এবং বালককে একটি কাঠের শূলীতে ঝুলিয়ে দিলো। তারপর তার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রেখে "বালকের রব আল্লাহর নামে" বলে তার দিকে তা ছুড়ে মেরে দিলো। তীরটি বালকের কানের নীচে গিয়ে ঢুকলো। তীর ঢোকার জায়গায় বালক নিজের হাত রাখলো এবং সাথে সাথেই সে মারা গেলো। বালকের এমন মারা যাওয়া দুষ্ট বাদশাহর দেশের লোকজন দেখতে পেয়ে সবাই তিন বার বলে উঠলো, “আমরা বালকের রবের ওপর ঈমান আনলাম! আমরা বালকের রবের ওপর ঈমান আনলাম! আমরা বালকের রবের ওপর ঈমান আনলাম!”
.
দেশের লোকজন সবাই ঈমান এনেছে এমন সংবাদ বাদশাহকে জানানো হলো এবং তাকে বলা হলো, "দেখেছেন আপনি যার ভয় পেয়েছিলেন, আল্লাহর কসম! সেটাই আপনার সাথে ঘটে গেলো। মানুষেরা ঈমান এনেছে।” এ দেখে দুষ্ট বাদশাহ সকল রাস্তার মাথায় গর্ত বানানোর আদেশ দিলো। গর্ত বানানো হলো এবং গর্তের ভেতর আগুনও জ্বালানো হলো। এরপর বাদশাহ আদেশ করলো যে, “যে লোক তার দীন বাদ না দিবে তাকে ওগুলোতে ফেলে দিবে।” অথবা সে বললো, “তাকে বলবে, যেন সে আগুনে ঢুকে পড়ে।” লোকেদের ভয় কী! তারা জানে ও বুঝে নিয়েছে যে বালকের রব আল্লাহই সত্য। তাই আগুনে ঢুকতে কোনোই ভয় নেই। অতএব কোনো ভয় ছাড়াই তাঁরা আগুনে ঢুকে পড়লো। আগুনে ঢুকে মরলেও আল্লাহ চাহে তো আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাত দিবেন। সবশেষ ঘটলো কী, এক মহিলা একটি বাচ্চা নিয়ে আগুনে যাবে কি যাবে না সে চিন্তা করছিলো। এ দেখে বাচ্চা তাঁকে মানে তাঁর মাকে বললো, “আম্মু, আপনি সবর (ধৈর্য্য) ধরুন, আপনি তো সত্য দীনের উপর আছেন।” [১]
.
ছোট_গল্প_(২২)
.
[১] আস-সহীহ, মুসলিম, ৩০০৫

Post a Comment

0 Comments