Ticker

6/recent/Main-posts

Header Ads

ফয়জুল করীম এর উপর হামলায় পালটে গেল রাজনীতির গতিপ্রকৃতি

মুফতী ফয়জুল করীম এর উপর হামলা,যেভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো রাজনীতির গতিপ্রকৃতি।


রাজনীতির ছাত্র হিসেবে বলতে পারি,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর বর্তমান রাজনীতির গতি প্রকৃতি অনেকটা সন্তোষজনক। বিশেষ করে বরিশালে দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম শায়েখে চরমোনাইর উপর হামলার পর রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে আলোচনায় দলটি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্টিত হলেও দলটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে।কোন জোটে না থেকেও অল্প সময়ে রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে দলটি। দলটিকে অনেকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বলে প্রচার করে থাকে।দলটিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে প্রচারকারীদের যুক্তি হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সভা সমাবেশে প্রশাসন বাধা দেয়না।এই যুক্তি রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কে বাঁধা না দেওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে।(১) দলটি বিরোধী দল তথা বিএনপির জোটে না থাকা (২) দলটি আওয়ামী লীগের মূলপ্রতিদ্বন্দী হতে না পারা । আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এটাই মনে হয়েছে।

দলটিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বলে প্রচার করতো মূলত বিএনপির জোটভুক্ত দলগুলো।সময়ের আবর্তে এখন তাদেরকেই আওয়ামী লীগের বি-টিম বলছে।এটা নিশ্চয়ই প্রকৃতির প্রতিশোধ।দুই যুগ ধরে একটি দলের উপর আরোপিত অপবাদ এখন আর কেউ বিশ্বাস করছে না।১২ জুন ২৩ বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম শায়েখে চরমোনাইর উপর আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার পর থেকে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বি-টিম নয়। সাংবাদিক ইলিহয়াস হাসানসহ বিএনপি জামায়াতের অসংখ নেতা কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে সরকারের সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর গোপন বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই শায়েখে চরমোনাইকে মেয়র বানিয়ে দিতে বলেছে।ইলিয়াসের সেই মিথ্যাচার বিএনপি জামায়াত এর হাজারো ভাইয়েরা প্রচার করেছে।ইলিয়াস এখন জামায়াতকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে গলা ফাটাচ্ছে।আসলে ইসলামপন্থীরা রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হয়ে উঠুক সেটা কেউ চায়না।বিদেশি এজেন্সি এবং দেশীয় ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে কাউকে রাজনীতিতে একক শক্তিমত্তা নিয়ে দাঁড়াক সেটা চাইছে না।এই কারণে এক দল দিয়ে অন্য দলকে ঘায়েল করতে উস্কানি দেয়।তাদের উস্কানিতে পা দিয়ে ইসলামী দলগুলো একে অন্যকে দালালসহ কড়া কথা বলতে দ্বিধা করেনা।এখন সময় পাল্টেছে।জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জোট না হলেও পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ভেস্তে যাবে।সেই জন্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে কটু কথা এবং কাদা ছুড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে।

শায়েখে চরমোনাইর উপর হামলা রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কে ১০ বছর এগিয়ে দিয়েছে। হামলার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক প্রকার অঘোষিত জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে।সেই সাথে শায়েখে চরমোনাই দেশ বিদেশে সুপরিচিত মজলুম জননেতার আসন গেঁড়ে বসেছে।যারা তাঁকে দু-চোখে দেখতে পারতো না তারাও তাঁর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্র বামপন্থী ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল শায়েখে চরমোনাইর উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের জোটে থাকা তরিকত ফেডারেশনও বিবৃতি দিয়েছে। মতপার্থক্য থাকা স্বত্বেও রাজনৈতিক দল কর্তৃক এমন বিবৃতি রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে।বিএনপিসহ ১৫ রাজনৈতিক দলের সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মতবিনিময় প্রমাণ করে রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নতুন করে অভিষেক হয়েছে । একটি হামলা রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।হামলার পর শায়েখে চরমোনাই ও দলের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়েছে।সেই সাথে বি-টিম নামক অপবাদ মুছে দলটি স্বচ্ছ বিরোধী দল হিসেবে জানান দিচ্ছে। ভু্ল ভেঙেছে দুই যুগ ধরে যারা আওয়ামী লীগের বি-টিম বলেছে তাদের।

আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে সারা দেশে তৃণমূলে শক্ত অবস্থান রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর।আওয়ামী লীগ যখন দেখছে হাতপাখা নৌকা ডুবির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন তারা হাতপাখা রূখে দিতে সন্ত্রাসী হামলা করেছে।বরিশালে একচেটিয়া হাতপাখার ভোট দেখে তাদের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়।হামলার পরও ভোট গণনার সময় যখন দেখে ২৫ কেন্দ্রে হাতপাখার প্রাপ্ত ভোট ১৭ হাজার আর নৌকার ভোট ৫ হাজার তখন তাদের মাথা ঘুরিয়ে যায়।এর পর থেকে হাতপাখার ফল নৌকায় এবং নৌকার ফল হাতপাখাতে দেখাতে শুরু করে।বরিশাল সিটিতে হাতপাখার ভোট ৮৭ হাজার আর নৌকার ভোট ৩৪ হাজার।হাতপাখার ভোট নৌকায় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্বশিক্ষিত আবুলকে বিজয়ী দেখিয়েছে অথর্ব সিইসি।যা হোক,মেয়র নির্বাচিত হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যতটা না এগিয়ে যেতো এর চেয়ে বেশি এগিয়েছে মেয়র না হওয়ায়। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।মেয়র হলে দালাল ঠ্যাক মুছতো না।সে সাথে রাজনীতিতে দলটি এতোটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারতো না।প্রত্যেক ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে।এটা সত্য যে,ক্রিয়ার চেয়ে প্রতিক্রিয়া দ্বিগুণ হয়।হামলার প্রতিক্রিয়া তেমনি অনেক গুণ বেড়ে ফ্যাসিবাদী শক্তির মসনদে কম্পন ধরিয়েছে।আগামীর রাজনীতির ইতিহাস রচিত হলে সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নাম সুন্দরভাবে স্থান পাবে।কল্যাণের রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হয়ে উঠুক আমজনতার প্রিয় দল।সেই প্রত্যাশায় রইলাম।

Post a Comment

0 Comments